বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চূড়া ছুয়ে আসার গল্প! খরচ ও রুটপ্ল্যানসহ❤️

 






এই বছর মার্চ মাসে ঢাকা থেকে আমরা ৮ জনের টিম নিয়ে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চূড়া জৌতলং এবং চতুর্থ চূড়া যোগী হাফং সামিট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।কিন্তু কে জানতো আমাদের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে?

রাত ১১ টার দিকে আমাদের বাস(সৌদিয়া) ঢাকা থেকে বান্দরবানের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।যখন বান্দরবান পৌছালাম তখন ফজরের আজান দিচ্ছে।সকালের এক অদ্ভুত স্নিগ্ধতায় বাস জার্নির সকল ক্লান্তি এক নিমিষেই চলে গেলো।ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে থানচি যাওয়ার জন্য চান্দের গাড়ি ঠিক করলাম।ভেবেছিলাম বাসে যাবো কিন্তু চান্দের গাড়িতে উঠে বুঝলাম পয়সা উসুল।রাস্তাটা কিছুটা বিপদজনক বটে।এক পাশে পাহাড় আবার আরেক পাশে বিশাল নিচু জায়গা।রাস্তাটা ভূপৃষ্ঠ থেকে যথেষ্ট উপরে।বান্দরবান থেকে থানচি রোডটা অত্যন্ত সুন্দর।সারি সারি পাহাড়,নীল আকাশ আপনার ভালো লাগবেই।দুপুরে থানচি গিয়ে পৌছালাম।থানচি থেকে যেতে হবে রেমাক্রি নৌকায় করে।আমাদের ইচ্ছা ছিলো যোগী হাফং আর জৌতলাং দুই পাহাড় দুইদিন সামিট করব।আসার সময় নাফাখুম হয়ে আসবো।এটা আমাদের প্রথম ট্র‍্যাকিং ছিলো।থানচি থেকে গাইড নিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে দুটো নৌকা ঠিক করলাম।থানচি বাজার থেকে ট্র‍্যাকিং জুতা,বিস্কিট,চানাচুর,চিপস,স্যালাইন এবং ঢাকা থেকে খেজুর,কিছু প্রয়োজনীয় ঔষধ নিয়েছিলাম।এরপর থানায় এন্ট্রি করে নৌকা উঠে বসলাম।থানচি ঘাট থেকে নৌকা যখন ছাড়লো তখন ৩ টা বাজে।আমরা সাংগু নদী ধরে চলতে শুরু করলাম এবং সকল মোবাইল নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম।আমার মনে হয় সাংগু নদী বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সুন্দর জায়গা।সবাই হা করে নদীর দুই পাশের সৌন্দর্য গিলতেছিলাম।সূর্যের নরম আলোয় যেনো সব অপার্থিব লাগছিলো।ছোট বড় পাথরের উপর দিয়ে বয়ে চলেছে সাংগু।নদীর পাশ থেকে হঠাৎ করেই যেনো খাড়া পাথুড়ে দেয়াল উঠে গেছে অনেকখানি।সেই পাথুরে দেয়ালকে আবার গাছপালা গ্রাস করে নিয়েছে।একপাশে পাহাড় আর আরেকপাশে উপজাতিদের পাড়া।মাঝে মাঝে দু একটা দোকানও চোখে পড়বে৷পুরো নদীই পাথরে ভরপুর। কিছুক্ষণ পড় রাজা পাথর দেখলাম।আকারে সব পাথরের থেকে বিশাল।রেমাক্রি যেতে যেতে সন্ধ্যা হয়েই গেলো।এখান থেকেই আমাদের ট্র‍্যাকিং শুরু।নৌকার মাঝিকে বলে গিয়েছিলাম দুই দিন পর যেনো এখানে আবার অপেক্ষা করে।কারণ আমরা নেটওয়ার্কের বাইরে।ফোন করা সম্ভব নয়।গোধুলির আলোয় আশে পাশের পাহাড়গুলোকে যেনো দৈত্যের মত লাগছে।এখান থেকে ৩ ঘন্টার মত হেটে যেতে হবে অতিরাম পাড়া।আমাদের গাইড বিজয় দাদা আগে থেকেই থাকার ব্যাবস্থা করে রেখেছে।রেমাক্রি থেকে একটা ঝিরি পথে আমরা হাটা শুরু করলাম।পাহাড়ে সন্ধ্যা নামে ঝুপ করে।হঠাৎ করেই যেনো সূর্য ডুবে চারদিক অন্ধকার হতে গেলো।ধিরে ধিরে কিছুক্ষ্ণ পর চাদের আলো ফুটতে শুরু করলো।আমরা ইচ্ছা করেই পূর্নিমাতে আমাদের ট্যুরের প্ল্যান করেছিলাম যাতে পাহাড়ে জ্যোৎস্না বিলাশ করা যায়😇।হাটতে হাটতে ঝিরি পথ শেষে চলে এলাম একটা পাহাড়ের নিচে।এই পাহাড় পাড় হলেই অতিরাম পাড়া।সারাদিন এত জার্নির ধকল সহ্য করে আর ইচ্ছা হচ্ছিলো না এক পা আগাই।আমরা সবাই উঠতে শুরু করলাম।পাহাড়ে ওঠা যে এত কষ্ট আগে জানতাম না।প্রতিটা কদমে যেনো আমাদের সবার শরীর প্রতিবাদ জানাচ্ছে।প্রায় উপরে উঠে একটা ছোট ঘরের মত দেখলাম।ওখানে সবাই রেস্ট নেয়ার জন্য বসলাম।এই সময় একটু চারদিকে তাকানোর সুযোগ হলো।পূর্নিমার চাদের আলোতে যেনো ভেসে যাচ্ছে চারিদিক।চারদিকে পাহাড় আর ঘন জংগলকে চাদের আলো যেনো এক আলাদা রুপ দিয়েছে।এ এক ভয়ংকর সুন্দর অভিজ্ঞতা।কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে আবার চলতে শুরু করলাম।একসময় পৌছে গেলাম অতিরাম পাড়ায়।টায়ার্ড হওয়ায় ভাবলাম গোসল করলে ভালো লাগবে।গোসলখানায় গিয়ে দেখি কোন বেড়া দেয়া নেই।সামনে একটা বড় পাহাড়।আর মাঝখানে জংগল।এত সুন্দর গোসলখানা এর আগে সত্যিই দেখি নি😉

সবাই গোসল করে খেয়ে দিলাম ঘুম।এখানে সব জুমের চালের ভাত।ভোরে ৬ টার দিকে উঠলাম।আজকে আমরা জৌতলাং সামিট করব।সৌমিক কোন ভাবেই যাবে না পাহাড়ে উঠতে।অনেকটা জোড় করেই নিয়ে গেলাম।সকালে খেয়ে বের হয়ে পড়লাম তাড়াতাড়ি কিছু শুকনা খাবার নিয়ে।পাড়া থেকে দুইজন লোকাল গাইড নিতে হয়েছে।আমাদের সাথে যে গাইড আসছে সে পাড়াতেই থাকবে।একটা ছোট মাঠের মধ্য দিয়ে আমরা হাটতেছি।একটু পর একটা বড়ই গাছ দেখতে পেলাম।কাছে গিয়ে দেখি আরে বড়ই গুলা একদম পাকা।কেও খায়ও না।সবাই যেনো ঝাপিয়ে পড়লাম পাহাড়ি বরই খাওয়ার জন্য।কিন্তু একটা মুখে দেয়ার পর বুঝলাম কেনো কেউ খায় না🤣।বিচ্ছিরি টক😆।বড়ই ছেড়ে হাটা ধরলাম।একটু পর একটা ঝিরি পথ ধরে আগাচ্ছি।সামনে পড়ল একটা পাহাড়।এইটা পাড় করতে হবে।এটা পার হলে আরেকটা পাহাড়।তারপর জৌতলাং।ঠিক সেই সময় যেনো মনে হলো ভুল করলাম না তো?কালকে ছোট একটা পাহাড় পার করতেই অবস্থা খারাপ হয়ে গেছিলো।কিছুটা সংশয় নিয়েই উঠা শুরু করলাম।একটু উঠতে না উঠতেই এনার্জি শেষ।স্যালাইন নিয়ে এসেছিলাম।পানির সাথে মিশিয়ে খেয়ে আবার চলতে শুরু করলাম।তূর্য সবার আগে আগে যাচ্ছে লাফিয়ে লাফিয়ে।বিয়ার গ্রেইলস হওয়ার বৃথা চেষ্টা করছে।কতক্ষন পরেই দড়াম করে পরল আছাড়🤣।আমি অনেক কষ্টে হাসি চাপিয়ে বললাম ব্যাথা পাইছিস বন্ধু।পরে দেখি পায়ে কিছুটা কেটে গেছে।আসতে আসতে আমরা প্রায় জোৎলাং এর গোড়ায় এসে পরলাম।অলরেডি ১০ টা বাজে।এরপর উঠতেছি আবার খাড়া ঝিরি পথ ধরে।কষ্ট হলেও এই রুট এতটা সুন্দর বলে বোঝানো যাবে না।পাহাড়ের গা বেয়ে পাথুরে ঝিরি পথ সোজা উঠে গেছে।ঝিরিতে পানি নেই বললেই চলে।ঝিরির পানি একদম মিনারেল ওয়াটার এর মত।একদম পরিষ্কার।নির্ভয়ে খাওয়া যায়।পথটা এতটা সুন্দর যে জাফর বলছে এত সুন্দর ক্যান।চোখে সহ্য হচ্ছে না😅।পাখির দুই একটা ডাক ছাড়া পরিবেশ একদম নিশ্চুপ।কিছুক্ষন পরেই দেখি একটা পাখির বাসা।৪ টা ডিমও আছে❤️।যাইহোক ধিরে ধিরে ঝিরি পথ শেষ হয়ে আসলো।এবার তূর্য আবার খেলো আছাড়🤣।এবার তেমন কাটে নি তবে ব্যাথা পেয়েছে ভালোই।এবার ঝিরি শেষে চলে আসলো মাটির পথ।চারপাশে আদিম বুনো জংগল।এক এর পর এক স্টেপ উঠছি।প্রত্যেকটা স্টেপই এক একটা মৃত্যু ফাদ ছাড়া আর কিছুই নয়।কোন ভাবে হাত ফসকে গেলে যে তার ফলাফল খারাপ হবে বুঝতে পারছিলাম।কিছুক্ষণ পর পর রাস্তা একদম খাড়া উঠে গেছে।বাশ ফালানো আছে সেগুলো ধরে ধরে উঠছি।এর মধ্যে অনেকবার রেস্ট নিয়ে নিয়েছি।আমাদের লোকাল গাইড দুইজন অত্যন্ত ভালো ছিলো।আমাদের অনেক সাপোর্ট দিয়েছে।সবার এনার্জি একদমই শেষ অথচ এখনো চূড়ায়ই উঠা হয় নি।আবার নামতেও হবে।এতক্ষনে বুঝলাম স্বপ্নটা দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।এখন ফিরে যাওয়াও সম্ভব না।অথচ দেহের প্রতিটা কোষ প্রতিবাদ জানাচ্ছে।খেজুর খেয়ে আবার উঠা শুরু করলাম।উঠছি তো উঠছি রাস্তা শেষ হয় না।৩৪০০ ফুট কমও না।সায়হামের দিকে একবার তাকালাম।দেখি বেচারা তব্দা খেয়ে গেছে আমার মত।এক বিন্দু এনার্জি নাই।তবে খেজুর অনেক কাজে দিয়েছে।তিন চারটা খেলেই আবার ভালো শক্তি ফিরে পাচ্ছি।আছাড় খেয়ে তুর্য আর কথাই বলছে না।রবোটের মত উঠতেছে।এতক্ষণ ওই আমাদের টিমে সবাইকে মাতিয়ে রেখেছিলো।যার দিকেই তাকাই সবার মুখ কালো😑।কে জানে এত পরিশ্রম হবে।অনেক্ষণ পর একটু সমতল রাস্তার মত পেলাম।মনে হল এসে পরেছি প্রায়।এইটুকুতে বাশের আধিক্য বেশি।প্রচুর ঘন বাশ।একটু আশে পাশে ঘুরার জায়গা নেই।কতক্ষণ যাওয়ার পর দেখি আবার খাড়া পথ😑।৯০ ডিগ্রি অ্যাংগেলে উঠে গেছে।এবার আর মন মানতেছে না।সৌমিক বার বার বলছে ব্যাক করবে।আমাদের প্রথম ট্র‍্যাকিং হওয়ায় বেশি কষ্ট হচ্ছিলো।মাঝখানে আমি আর বাবু আবার রেষ্ট নেয়ার জন্য থামলাম আর ভাবলাম পাহাড় কতটা ভয়ংকর।কিছু খেজুর আর স্যালাইন খেয়ে আবার চলতে আরম্ভ করলাম।মনে হল প্রায় এক যুগ পর গাইড বলছে এসে পরেছি সামনেই সামিট পয়েন্ট।হাটার গতি বাড়িয়ে দিলাম।আমি,ইশান,বাবু মাঝখানে।শেষে সায়হাম সৌমিক আর তূর্য।জাফর,নিলয় আগেই এসে পরছে গাইডের সাথে।সামিট পয়েন্টে যাওয়ার পর দেখি কোন ভিউ নাই।রাগে অন্ধ হইয়া গেলাম।তার মধ্যে চূড়ায় দেখি কারা যেনো খাবারে প্যাকেট,পলিথিন ফেলে গেছে।মনটাই খারাপ হয়ে গেলো।চারপাশে শুধু বাশ।সামনে দিয়া একটু দেখা যায় মায়ানমারের পাহাড় গুলা।তবুও বাংলাদেশের ২য় সর্বোচ্চ চূড়া জয় তো করেছি।এটা ভেবেই শান্তি লাগছে।চূড়ায় আইসা দেখি খাবার শেষ।পানি শেষ।সামান্য কিছু বিস্কিট ছিলো।আর কলা।অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে অল্প খাবার নিয়ে এসেছিলাম।সামিট করেছিলাম ২ টা ২৪ মিনিটে।সামিট নোট লেখছি দেখি ইশান ঘুমাইছে😆।১ ঘন্টা রেস্ট নিয়া খাবার ছাড়া পানি ছাড়া নামা শুরু করলাম।ঝিরি তে গিয়া পানি পাওয়া যাবে।তাও ২ ঘন্টার পথ।আল্লাহর নাম নিয়া নামা শুরু করলাম।ভাবছিলাম নামা সহজ হবে।কিন্তু খাড়া পথে উঠতে যেমন কষ্ট হচ্ছিল নামতেও তেমনই কষ্ট হচ্ছিলো।পানির তেষ্টায় বুকের ছাতি মনে হয় ফেটে যাবে।১ ঘন্টা যাওয়ার পর দেখি ওরা অনেক আগে চলে গেছে।আমি,গাইড,নিলয় আর সৌমিক আমরা শেষে।নামার সময় খাড়া পথ দেখে মনে হচ্ছে এই পথ উঠলাম কিভাবে!ইতিমধ্যে আমার পায়ে বড় দুটো ফোস্কা পরেছে।আমাদের এই তিনজনের অবস্থা বেশি খারাপ।কিছুক্ষন পড় ঝিরিতে এসে পরলাম।পানি খেলাম ইচ্ছা মত।ইতিমধ্যেই ঝুপ করে চারদিক অন্ধকার হয়ে গেলো।অন্ধকারে ট্র‍্যাকিং করা এক ভয়াবহ ব্যাপার।ফোনের ফ্লাশ জ্বালিয়ে চলতে আরম্ভ করলাম।তবে কতক্ষণ পরেই চাদের আলো ফুটে উঠলো।আহ কি পরিবেশ।পাহাড়ের ঘন জংগলে জৌৎস্না বিলাশ🥰।এক সময় জোতলাং এর গোড়াতে এসে পরলাম।একটু পর আরেকটা পাহাড় পাড়ি দিতে হবে ভেবেই গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো।শরীরে কোন এনার্জি নেই।কিভাবে আমরা হাটতেছি মাথায় ধরছে না।হঠাৎই সেই বরই গাছটার কথা মনে পড়ল।ওখানে গেলেই খাবার পাওয়া যাবে।আরেকটা পাহাড় উঠে আবার নামলাম।ঝিরি ধরে হাঠছি।চাদের আলোয় চারদিক খা খা করছে।এ এক ভয়ানক সুন্দর জায়গা।হাঠছি আর সবাই ভাবছি সেই বড়ই গাছটা আসে না কেনো।একটু পরেই দেখি গাছটা দেখা যাচ্ছে।দিলাম দৌড়।বড়ই মাটিতে যেগুলো পরে ছিলো সেগুলো খাওয়া শুরু করলাম আগে।কিসের পাকা আর কিসের কাচা যেটাই খাই মনে হচ্ছে অমৃত খাচ্ছি😆।সে কি স্বাদ।বড়ই ভোজনের পড় আবার হাটা দিলাম।তবে টক বরই মিষ্টি হওয়ার সাইন্স টা মিলাতে পারলাম না।মনে হয় এক যুগ পর পাড়ায় এসে পৌছুলাম।এসেই এক ঘর থেকে পাকা পেপে খেলাম।পাহাড়ি পেপে যে এতটা মিষ্টি হয় জানতাম না।আমাদের আগেই জাফর,ইশান,বাবু এসে মুদি দোকানে ঢুকেছে।আমরাও এসে ঢুকলাম।হাত টা ধুয়েই এমন খাওয়া খাইছিলাম সবাই।দোকানের অর্ধেকের বেশি মনে হয় আমরাই শেষ করছিলাম।খাওয়া শেষে রুমে চলে আসলাম সবাই।এসে দেখি আমাদের মেইন গাইড ব্যাম্বু চিকেন তৈরী করছে।জুমের ভাত দিয়ে আরো এক চোট খাওয়া সারলাম সবাই।তারপর গোসল দিয়েই ঘুম।এই জনমে সবার এডভেঞ্চার এর সাধ মিটে গেছে😂।যোগী সামিট না করে এখান থেকে নাফাখুম হয়ে রেমাক্রি যাবো প্ল্যান করলাম।পরদিন সকাল।পাড়া থেকে আরেকজন লোকাল গাইড নিয়ে নাফাখুমের উদ্যেশ্যে যাত্রা করলাম।৩ ঘন্টা ট্র‍্যাকিং এর পর নাফাখুমের কাছাকাছি আসতেই পানির শব্দ পেলাম।পথের মোড়টা ঘুরতেই দেখলাম অনিন্দ্যসুন্দর নাফাখুম।পুরা ট্যুরের ক্লান্তি যেনো উবে গেলো।১ ঘন্টার মত গোসল করে আবার হাটা দিলাম রেমাক্রির উদ্যেশ্যে।একসময় রেমাক্রি এসে পরলাম।এরপর নৌকায় করে থানচি যেতে যেতে সন্ধ্যা।থানচিতে এসে হোটেলে রাত টা কাটালাম কোন মতে।পরদিন সকাল বেলা থানচি থেকে বাইক নিয়ে সবাই চলে গেলাম আলিকদম।থানচি থেকে আলিকদম এই এই রোড বাংলাদেশের সবচেয়ে উচু সড়ক(২৫০০ ফুট)।আর এত সুন্দর যে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।তবে আমরা মেঘ পাই নি।প্রায় সময়ই এই সড়ক থাকে মেঘের উপরে।আলিকদম থেকে চট্টগ্রাম এবং সেখান থেকে ঢাকার বাস ধরলাম।



রুট প্লান এবং খরচঃ

ঢাকা থেকে বান্দরবান বাসে ৬২০ টাকা

বান্দরবান থেকে থানচি চান্দের গাড়ি ৪০০০ টাকা

থানচি থেকে রেমাক্রি নৌকা ভাড়া প্রতি নৌকা ৪৫০০ টাকা আপ ডাউন

দুইটা নৌকা ৯ হাজার টাকা

মেইন গাইড ভাড়াঃ২০০০ টাকা

লোকাল গাইড তিন জনের টোটালঃ১৫০০ টাকা

[গাইড বিজয় হতে সাবধান⚠।কিছু ভালো মত চিনে না আর আমাদের কাছ থেকে কিভাবে শুধু টাকা খরচ করানো যায় সেই ধান্ধায় থেকেছে।কোন কাজই ঠিক মত করে নি।]

থানচি টু আলিকদম বাইক ভাড়া জন প্রতি ৩০০ টাকা

অতিরাম পাড়ায় থাকা জন প্রতি ১৫০ ও খাওয়া ১৫০(প্রতি বেলা)

আলিকদম থেকে চট্টগ্রাম বাসে ১৬০ টাকা

চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা বাস ভাড়া ৫০০ টাকা

আমাদের জন প্রতি ৭ হাজার টাকা করে খরচ হয়েছিলো।


রুটঃঢাকা-বান্দরবান-থানচি-রেমাক্রি-অতিরামপাড়া-জোতলাং-অতিরাম পাড়া-নাফাখুম-রেমাক্রি-থানচি-আলিকদম-চট্টগ্রাম-ঢাকা


[বিঃদ্রঃ ভ্রমণে গিয়ে কেও কোন ধরণের অপচনশীল দ্রব্য ফেলে সৌন্দর্য নষ্ট করবেন না।পুরো ভ্রমণে আমরা কোথাও কোন প্লাস্টিক দ্রব্য ফেলি নি।]

©শাকিব হাসান সাগর 


রিপোর্ট: শেখ সাইদুর ইসলাম।


Comments

Popular posts from this blog

গোস্ট অফ কেটু!! পৃথিবীর সবথেকে রহস্যময় ভুতূরে পর্বতশৃঙ্গ 😮😲

কক্সবাজার সেন্টমার্টিন বাজেট ট্যুর।

কে এই ড.জাফর উল্লাহ? আসুন কিছু তথ্য ড. জাফরুল্লাহ সম্পর্কে একটু জেনে নিই।